একজন আনিছের মাদকাসক্তি থেকে সুস্থ জীবনে ফেরার গল্প আনিছের বর্তমানটা অনেক সুন্দর। গত তিন বছর হলো তিনি মাদকমুক্ত আছেন। তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, কলিগ সবাই তাকে ভালবাসে এখন। তার এই পরিবর্তনের পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে শাহজাদপুরের ডিটিসি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। ডিটিসির নিয়ম কানুন ও সুচিকিৎসার কারনে আমি মাদক ছেড়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছি বলে মন্তব্য করেন আনিস। চৌত্রিশ বছরের যুবক মোঃ আনিছুল ইসলাম (ছদ্মনাম) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি ডিটিসি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হতে চিকিৎসা নিয়ে মাদকাসক্তি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। এখন তিনি বাস, ট্রাক,পিকআপ ও মোটর সাইকেলের টায়ার বিক্রি করেন। তিনি আগে থেকেই এ ব্যবসাতে নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অনেক ভাল ব্যবসা করছেন, দুই সন্তান সহ পরিবার নিয়ে অনেক ভাল আছেন, সমাজে ও তার গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, কিন্তু তিনি যখন নেশায় আচ্ছন্ন ছিলেন তখন তিনি ছিলেন জীবন ও জগত থেকে বিচ্ছিন্ন। তার সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি সতের বছর বয়স হতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে গাঁজা খাওয়া শুরু করলেও অল্পদিনের মধ্যে ফেনসিডিল ও ইয়াবা খাওয়া শুরু করেন। দিনের যা আয় হয় তার পুরোটাই ব্যয় করতে শুরু করেন নেশার পিছনে। বাবার ফোন ফ্যাক্সের দোকানে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে চলে যায় সংসার। সন্তানের আয়ে সংসার একটু ভালভাবে চলতে পারে বলে বাবা আশা করলেও আনিছের আয় কোনদিনই বাবা চোখে দেখেনি। এদিকে তার নেশা খাওয়ার খবর তার কর্মস্থলে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তার বাবা মানুষের কাছে লজ্জায় পড়ে যান। কিন্তু আনিছ কারো কথাই শোনে না। নেশা করা ছাড়া সে কাজ করতে পারে না, কথা বলতে পারে না। বলতে গেলে নেশাই তাকে খাওয়া শুরু করেছে। রাত করে বাড়ি ফেরা, দেরী করে সকালে ঘুম থেকে ওঠা, কেউ কিছু বললে অত্যন্ত বেশী পরিমানে রাগারাগি করা- এ যেন তার জীবনের অংশ হয়ে গেল। আনিছ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল জীবন সংসার থেকে। বাবা-মা ভাবলেন বিয়ে করিয়ে দিলে হয়ত সংশোধন হবে, কিন্তু না বিয়ের পর সমস্যা বেড়ে গেল আরো কয়েকগুন। স্ত্রীর অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সংসারের চাহিদা মেটাতে পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আনিছ যখন তলিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতল গভীরে, দম বন্ধ অবস্থা, মাদকের নীল চোখের পাতায় আবছা একটি চেহারা ভেসে ওঠে, তার সন্তানের চেহারা। তার মনে হয় - আমার সন্তানকে কেউ যদি বলে তুই নেশাখোরের সন্তান, তাহলে তো ওর মৃত্যু হয়ে যাবে। আনিছ নেশায় অবসন্ন হাতে ভর দিয়ে উঠে দাড়াতে চায়, পারে না, পড়ে যায়, আবার চেষ্টা করে ওটার, এবার সফল হয়। সন্তানের মুখ মনে নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আনিছ সংকল্প করে সুস্থ জীবনে ফেরার। আনিছের মনে পড়ে ডিটিসি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কথা। ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান শাহীনের সাথে কথা বলে ভর্তি হন। চার মাসের নিবিড় পরিচর্যায় নিয়ম শৃংখলার মধ্যে থেকে ফিরে আসেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে। ২০১৭ সালের চিকিৎসার পর হতে আনিছ আর মাদক সেবন করে না। তিনি জানান ডিটিসির সাথে আমার এখনো যোগাযোগ আছে এবং আমি ডিটিসির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।