মাদক গ্রহণের ফলে প্রাথমিক সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। এই ক্ষণস্থায়ী স্বস্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর ফাঁদ। ফাঁদে একবার জড়ালে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, সৃজনীশক্তি শেষ হয়ে যায়। ‘স্বাস্থ্যহানি’ বলতে কেবলই দৈহিক স্বাস্থ্যের কথা বলা হচ্ছে না। দেহের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ও বিধ্বস্ত হয়ে যায় মনের স্বাস্থ্য, পুড়ে যায় আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক চিত্রে নেমে আসে দুর্যোগ। মাদকাসক্তির বড় কারণ মাদকের সহজলভ্যতা, মাদকের প্রতি তরুণ প্রজন্মের কৌতূহল ও নিছক মজা করার প্রবণতা, মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রকৃত ধারণার অভাব, মাদক বিষয়ে ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি—‘আমি ইচ্ছা করলেই মাদক ছাড়তে পারি’, পরিবারের ধরন, বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি, বন্ধুদের চাপ প্রভৃতি। পারিপার্শ্বিক কারণ—মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতাও অনেককে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে। উইথড্রয়াল ইফেক্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যও মাদক সেবনের জালে জড়িয়ে যেতে থাকে আসক্তজন। মানসিক সমস্যার কারণেও মাদকাসক্তি ঘটতে পারে। বিভিন্ন চিহ্নিত স্থানে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কেনাবেচা হয় মাদক। পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ বিক্রয় করা হয়, যা মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হয় চড়া দামে। বন্ধু-বান্ধবের চাপে পড়ে, তাদের সঙ্গ দিতে গিয়ে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে মাদক গ্রহণে বাধ্য হয় এবং এক পর্যায়ে আসক্ত হয়ে পড়ে। নিজেকে ‘স্মার্ট’ দেখানোর জন্য অনেকে মাদক নেয়, কেউ নিছক মজা করে একবার-দু’বার নিতে নিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেকে প্রথমে কৌতূহলের বশে মাদক গ্রহণ করে, ভাবে সে আসক্ত হবে না; কিন্তু এক পর্যায়ে সেও আসক্ত হয়ে পড়ে। বেকারত্ব, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি, পরীক্ষায় ফেল ইত্যাদি নানা কারণে মাদকের কাছে আশ্রয় নেয় তরুণ-তরুণীরা। মাদকের খপ্পরে পড়ে নিজের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে কেউ কেউ। ব্যক্তিত্বের কিছু সমস্যা যেমন এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি, শৈশবে বিকাশের সমস্যা, পারিবারিক কারণেও মাদক গ্রহণের জন্য দায়ী। টানাপড়েন ইত্যাদি কারণেও মাদকে আসক্ত হয়ে যায় অনেকে। একটা পর্যায়ে শরীর ও মন এমনভাবে মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে যে চিকিৎসা ছাড়া আর কোনোভাবেই মাদকমুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না।